ডেস্ক নিউজ : বিজয় মহান আল্লাহর অফুরন্ত নিয়ামতের অন্যতম নিয়ামত। এই নিয়ামত পেয়ে মহান আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে হবে। খুশিতে আত্মহারা হয়ে আল্লাহকে ভুলে গেলে চলবে না। আবার বিজয়ের আনন্দ প্রকাশ করতে গিয়ে আল্লাহর নিষিদ্ধ পথও অবলম্বন করা যাবে না। মনে রাখতে হবে, বিজয় আল্লাহরই দান।
নবী (সা.)-এর জীবনে বিজয় : মহানবী (সা.) জীবনে অনেক যুদ্ধের মোকাবেলা করেছেন। শান্তি, নিরাপত্তা এবং ইসলামের মর্যাদা রক্ষার জন্য তাঁকে প্রতিরোধমূলক এসব যুদ্ধ করতে হয়েছে। নবী (সা.) ২৭ যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং সাহাবিদের নেতৃত্বে ৫৬ অভিযান পরিচালনা করেছেন। (সিরাতুল মুসতাফা, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা. ৪৪-৪৫)
নবী (সা.)-এর যুদ্ধগুলোতে মানবতা লঙ্ঘিত হয়নি এবং কোনো যুদ্ধে নারী বা শিশু আক্রান্ত হয়নি। সবটিতেই মহান আল্লাহ তাঁকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বিজয় দান করেছেন। আর আল্লাহ তো ইসলামকে বিজয়ী করার জন্যই তাঁকে প্রেরণ করেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘তিনিই তাঁর রাসুলকে প্রেরণ করেছেন হিদায়াত ও সত্য দ্বিনসহ সব দ্বিনের ওপর বিজয়ী করার জন্য, যদিও মুশরিকরা তা অপছন্দ করে।’ (সুরা : সাফফ, আয়াত : ৯)
আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ : বিজয় অর্জন মহান আল্লাহর অন্যতম অনুগ্রহ। আল্লাহর দেওয়া শক্তি-সামর্থ্য দ্বারা মানুষ চেষ্টা করে বটে, কিন্তু ফলাফল দেওয়ার মালিক মহান আল্লাহ। তিনি দয়া করে বিজয় দান করেন। আল্লাহর এই অনুগ্রহ পেয়ে তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা বান্দার জন্য অপরিহার্য। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা আমার প্রতি কৃতজ্ঞ হও এবং কৃতঘ্ন হয়ো না।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৫২)
যাঁদের ত্যাগে বিজয় অর্জন তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা : কোনো মানুষ কারো অনুগ্রহে সন্তুষ্ট হয়ে আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলে পরস্পরের মধ্যে সুসম্পর্ক তৈরি হয়। সমাজে সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ববোধ প্রতিষ্ঠা হয়। মানুষ যদি মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞ না হয়, সে আল্লাহর প্রতিও কৃতজ্ঞ হয় না। কাজেই যাঁদের ত্যাগে বিজয় অর্জিত হয়েছে, তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতাবোধ থাকতে হবে। তাঁরা বেঁচে থাকলে তাঁদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন এবং সাহায্য-সহযোগিতা করতে হবে আর মারা গিয়ে থাকলে তাঁদের জন্য মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। আবু সাইদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না, সে আল্লাহর কাছেও কৃতজ্ঞ নয়।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১৯৫৫)
আল্লাহর মহিমা ঘোষণা : বিজয় পালনে অহংকার না করে বিনয়ের সঙ্গে আল্লাহর দিকে ধাবিত হতে হবে। আল্লাহর প্রশংসাসহ তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করতে হবে এবং ভুল-ত্রুটির জন্য তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যখন আসবে আল্লাহর সাহায্য ও বিজয়। এবং তুমি মানুষকে দলে দলে আল্লাহর দ্বিনে প্রবেশ করতে দেখবে। তখন তুমি তোমার প্রতিপালকের প্রশংসাসহ তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করো এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো, তিনি তো তাওবা কবুলকারী।’ (সুরা : নাসর, আয়াত : ১-৩)
বিজয়ের পর ক্ষমা ঘোষণা : রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর শান্তিপূর্ণ ‘মক্কা বিজয়’ ইতিহাসের এক চমকপ্রদ অধ্যায়। কার্যত তিনি বিনা যুদ্ধে ও বিনা রক্তপাতে মক্কা জয় করেন। যে জাতি অত্যাচার-নির্যাতন ও যুদ্ধ করে আজীবন রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে সীমাহীন কষ্ট দিয়েছে, সেসব জাতি ও গোত্রকে মক্কা বিজয়ের দিন সাধারণ ক্ষমা করে এবং তাদের প্রতি উদার মনোভাব দেখিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি বলেন, ‘আমি তা-ই বলব যা আমার ভাই ইউসুফ (আ.) বলেছেন, আজ তোমাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা করুন এবং তিনিই শ্রেষ্ঠ দয়ালু।’ (নাসাঈ আল-কুবরা, হাদিস : ১১২৯৮)
অতীতের বিজয় স্মরণ : বিজয় জীবনে স্মরণীয় হয়ে থাকে। কাজেই বিজয়ের শিক্ষা ধারণ করে জীবনকে গড়ে তুলতে হয় এবং বিজয়কে ধরে রাখার জন্য আজীবন চেষ্টা চালিয়ে যেতে হয়। বদরের যুদ্ধ ইসলামের ইতিহাসে অতিস্মরণীয় একটি যুদ্ধ। এক হাজারের এক প্রশিক্ষিত বাহিনীর মোকাবেলায় ৩১৩ জনের অপ্রস্তুত বাহিনীর অসম যুদ্ধে মহান আল্লাহ মুসলমানদের বিজয়ী করেছেন। সেটিকে স্মরণ করিয়ে আল্লাহ বলেন, ‘স্মরণ করো, তোমরা ছিলে স্বল্পসংখ্যক, পৃথিবীতে তোমরা দুর্বলরূপে পরিগণিত হতে। তোমরা আশঙ্কা করতে যে লোকেরা তোমাদের অকস্মাত্ ধরে নিয়ে যাবে। অতঃপর তিনি তোমাদের আশ্রয় দেন, স্বীয় সাহায্য দ্বারা তোমাদের শক্তিশালী করেন এবং তোমাদের উত্তম বস্তু জীবিকারূপে দান করেন, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞ হও।’ (সুরা : আনফাল আয়াত : ২৬)।
আমাদের জীবনে আসা বিজয়গুলোও এভাবে মূল্যায়ন করতে পারলে একদিকে জীবন সুন্দর হবে, অন্যদিকে যাদের ত্যাগে বিজয় পেয়েছি তাঁরাও মাগফিরাত লাভে ধন্য হবেন, ইনশাআল্লাহ।